রবীন্দ্র প্রবন্ধ উদ্ধৃতি– স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা
========= ( পর্ব — ৩ ) ===============
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনন, চিন্তন ও দর্শন বুঝতে গেলে রবীন্দ্র প্রবন্ধ পাঠ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো সহজ পন্থা নেই। এই ব্লগে তবুও আমরা রবীন্দ্র প্রবন্ধের উদ্ধৃতির মাধ্যমে এই অসাধ্য সাধনের কিছুটা চেষ্টা করছি।
স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা– এই পর্যায়ে আমরা আগে দুটি পর্ব করেছি। আজ তৃতীয় পর্ব। আজ আমরা আরও পাঁচটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করবো ।
প্রতিটি উদ্ধৃতি সাথে থাকছে মুল প্রবন্ধ গ্রন্থ ও প্রবন্ধের নাম। আগ্রহী পাঠকদের কাছে অনুরোধ তাঁরা যেন প্রয়োজনে মুল প্রবন্ধটি পাঠ করেন।
এছাড়াও রয়েছে ANUP BANDYOPADHYAY YOUTUBE CHANNEL – র ” রবিধারা ” ধারাবাহিকের তিরিশটিরও বেশি পর্ব। এখানেও আপনারা তুলনামূলক পাঠ শুনতে পারেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর– স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা – পর্ব – ০৪
১) স্বদেশ ও প্রত্যয় : – – আমার স্বদেশ, আমার চিরন্তন স্বদেশ, আমার পিতৃপিতামহের স্বদেশ, আমার সন্তানসন্ততির স্বদেশ, আমার প্রাণদাতা শক্তিদাতা সম্পদদাতা স্বদেশ। কোনো মিথ্যা আশ্বাসে ভুলিব না, কাহারও মুখের কথায় ইহাকে বিকাইতে পারিব না, একবার যে হস্তে ইহার স্পর্শ উপলব্ধি করিয়াছি সে হস্তকে ভিক্ষাপাত্র বহনে নিযুক্ত করিব না, সে হস্ত মাতৃসেবার জন্য সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করিলাম।
( ভারতবর্ষ / বিজয়া সম্মিলন)
রবীন্দ্র প্রবন্ধ উদ্ধৃতি– স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা (পর্ব – ০২)
২) স্বদেশ চর্চা:– এতকাল পরের দ্বারে আমরা মাথা কুটিয়া মরিবার চর্চা করিয়া আসিয়াছি, স্বদেশ সেবার চর্চা করি নাই। দেশের দুঃখ দূর, হয় বিধাতা নয় গভর্নমেনট করিবেন —- এই ধারণাকেই আমরা সর্বদা উপায়ে প্রশ্রয় দিয়াছি। আমরা যে দলবদ্ধ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইয়া নিজে এই কার্যে ব্রতী হইতে পারি, এ কথা আমরা অকপটভাবে নিজের কাছেও স্বীকার করি নাই। ইহাতে দেশের লোকের সঙ্গে আমাদের হৃদয়ের সম্বন্ধ থাকে না, দেশানুরাগ বাস্তবতার ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় না — সেইজন্যই চাঁদার খাতা মিথ্যা ঘুরিয়া মরে এবং কাজের দিনে কাহারও সাড়া পাওয়া যায় না।
( সমূহ/ দেশনায়ক )
৩) স্বদেশ- দেশ : — দেশের ইতিহাসই আমাদের স্বদেশকে আচ্ছন্ন করিয়া রাখিয়াছে। মামুদের আক্রমণ হইতে লর্ড কার্জনের সাম্রাজ্যগর্বোদগার
কাল পর্যন্ত যে কিছু ইতিহাসকথা, তাহা ভারতবর্ষের পক্ষে বিচিত্র কুহেলিকা; তাহা স্বদেশ সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টির সহায়তা করে না, দৃষ্টি আবৃত করে মাত্র। তাহা এমন স্থানে কৃত্রিম আলোক ফেলে, যাহাতে আমাদের দেশের দিকটাই আমাদের চোখে অন্ধকার হইয়া যায়।
( ভারতবর্ষ/ ভারতবর্ষের ইতিহাস )
৪) স্বদেশপ্রীতি:– এ কথা একবার ভাবিয়া দেখো, মাতাকে তাহার সন্তানের সেবা হইতে মুক্তি দিয়া সেই কার্যভার যদি অন্যে গ্রহণ করে তবে মাতার পক্ষে তাহা অসহ্য হয়।ইহার কারণ, সন্তানের প্রতি অকৃত্রিম স্নেহই তাহার সন্তানসেবার আশ্রয়স্থল। দেশহিতৈষিতারও যথার্থ লক্ষণ দেশের হিতকর্ম আগ্রহপূর্বক নিজের হাতে লইবার চেষ্টা। দেশের সেবা বিদেশির হাতে চালাইবার চাতুরি যথার্থ প্রীতির চিহ্ন নহে ; তাহাকে যথার্থ বুদ্ধির লক্ষণ বলিয়াও স্বীকার করিতে পারি না, কারণ, এরূপ চেষ্টা কোনোমতেই সফল হইবার নহে।
( আত্মশক্তি/ সফলতার সদুপায়)
প্রবন্ধ উদ্ধৃতি — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর– স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা। [ পর্ব–০১]
৫) স্বদেশের জ্ঞান:— আমাদের দেশের যথার্থ বিবরণ আজ পর্যন্ত প্রস্তুত হইয়া উঠে নাই, সেইজন্য যদিও আমরা স্বদেশে বাস করিতেছি তথাপি স্বদেশ আমাদের জ্ঞানের কাছে সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র হইয়া আছে।
( আত্মশক্তি/ ছাত্রদের প্রতি সম্ভাষণ)
এর পরের পর্বে আমরা- স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা- এই পর্যায়ের আরও কিছু উদ্ধৃতি আপনাদের জন্য নিয়ে আসব।
ভালো থাকবেন।