Anup Bandyopadhyay Website Logo
ads1-728x90

রবীন্দ্রনাথ ও মাতৃভাষা

রবীন্দ্রনাথ ও মাতৃভাষা

সম্প্রতি অমিত সাহজি শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে হিন্দি- ভাষার ব্যবহার সম্পর্কে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা ভারতের অন্যান্য ভাষা গোষ্ঠী কে যেমন চিন্তায় ফেলেছে, হিন্দি যাঁদের মাতৃভাষা তাদেরও সমস্যায় ফেলেছে। পৃথিবীর তাবৎ ঞ্জান- বিঞ্জানের ভাষা অনুদিত হয়ে আসছে ইংরেজি ভাষায়। তাই এটাই স্বাভাবিক যে আমরা ইংরেজি ভাষাটা ভালো করে শিখে সারা পৃথিবীর সব মানুষের সাথে সবরকম যোগাযোগ করবো। সহজ কথায় — মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভ করবো এবং দেশ- বিদেশের সাথে ঞ্জানের লেনদেন করতে ইংরেজি ভাষার সাহায্য নেব। কিন্তু কেবল হিন্দি এসে পরলে, সমস্যা তৈরি হবে। জোর করে শক্তি প্রয়োগ করে এক করতে চাইলে ঐক্য তো আসবেই না বরং তীব্র শত্রুতা তৈরি হতে পারে।

এইকথা গুলো কেন লিখলাম? লিখলাম এই জন্য যে —- রবীন্দ্রনাথ যিনি একজন শিক্ষাবিদও ছিলেন, তিনি এই ” মাতৃভাষা ” বিষয়টিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন , কী যুক্তি ব্যবহার করছেন আর ১৫০ বছর পেরিয়ে এসেও আমরা এই বিষয়টি কীভাবে মূল্যায়ন করছি ( নাকি রাজনীতি করছি?)।
আজ আমরা এই বিষয়ে চারটি উদ্ধৃতি পড়বো:-

Read More: রবীন্দ্র প্রবন্ধ উদ্ধৃতি– স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা (পর্ব – ০২)

১) আত্মপরিচয় ও ভাষা : –

যেহেতু মানুষের আত্মপ্রকাশের প্রধান বাহন হচ্ছে তার ভাষা, তাই সকলের চেয়ে বড়ো কাজ — ভাষার দৈন্য দূর করে আপনার যথার্থ পরিচয় লাভ করা এবং সেই পূর্ণ পরিচয়টি বিশ্বের সমক্ষে উদ্ঘাটিত করা।

( সাহিত্যের পথে / সভাপতির অভিভাষণ )

২) আত্মপ্রকাশ ও বাংলাভাষা :–

বাংলাভাষাকে নির্বাসিত করিয়া অন্য যে কোনো ভাষাকেই আমরা গ্রহণ করি না কেন, তাহাতে আমাদের মনের স্বাতন্ত্র্যকে দুর্বল করা হইবে। সেই দুর্বলতাই যে আমাদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় বললাভের প্রধান উপায় হইতে পারে, এ কথা একেবারেই অশ্রদ্ধেয়। যেখানে আমাদের আত্মপ্রকাশ বাধাহীন সেখানেই আমাদের মুক্তি। বাঙালির চিত্তের আত্মপ্রকাশ একমাত্র বাংলাভাষায়, এ কথা বলাই বাহুল্য। কোনো বাহ্যিক উদ্দেশ্যের খাতিরে সেই আত্মপ্রকাশের বাহনকে বর্জন করা, আর মাংস সিদ্ধ করার জন্য ঘরে আগুন দেওয়া, এক-ই জাতীয় মূঢ়তা।

Read More: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর– স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা – পর্ব – ০৩

( সাহিত্যের পথে / সাহিত্য সম্মিলন)

৩) আপন ভাষা ও বিদেশি ভাষা :–

প্রত্যেক দেশ যখন তার স্বকীয় ভাষাতে পূর্ণতা লাভ করবে তখনই অন্য দেশের ভাষার সঙ্গে তার সত্যসম্বন্ধ প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। ভাষার এই সহযোগিতায় প্রত্যেক জাতির সাহিত্য উজ্জ্বলতর হয়ে প্রকাশনা হবার সুযোগ পায়। যে- নদী আমার গ্রামের কাছ দিয়ে বহমান, তাতে যেমন গ্রামের এপারে ওপারে খেয়া- পারাবার চলে তেমনি আবার তাতে পণ্যদ্রব্য বহন করে বিদেশের সঙ্গে কারবার হতে পারে। কেননা সেই বহমান নদীর সঙ্গে অন্যান্য নানা নদীর সম্বন্ধ সচল।

( সাহিত্যের পথে / সভাপতির অভিভাষণ)

৪) আমাদের ভাষা — আমাদের উন্নতি :–

আমরা লাভ করিব কিন্তু সে লাভ আমাদের ভাষাকে পূর্ণ করিবে না, আমরা চিন্তা করিব কিন্তু সে চিন্তার বাহিরে আমাদের ভাষা পড়িয়া থাকিবে, আমাদের মন বাড়িয়া চলিবে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ভাষা বাড়িতে থাকিবে না, সমস্ত শিক্ষাকে অকৃতকার্য করিবার এমন উপায় আর কী হইতে পারে।

( পরিচয় / শিক্ষার বাহন )

এই ধরনের ২৭টি বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠিক কী বলেছেন ( মোট ৮০০ উদ্ধৃতি) জানতে
” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক প্রবন্ধ উদ্ধৃতি সংকলন” — গ্রন্থটি সংগ্রহ করতে পারেন।

ভালো থাকবেন।

ads1-728x90

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *