উদ্ধৃতি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – স্বদেশ স্বাধীনতা ও আমরা। [ পর্ব–০১]
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বদেশ ভাবনা, স্বাধীনতা ভাবনা এবং এর প্রেক্ষিতে আমাদের কর্তব্য কী কী হতে পারে – এই বিষয়টি মাথায় রেখে কিছু উদ্ধৃতি আপনাদের জন্য রাখলাম। বিশদ ব্যাখ্যা করা অথবা আলোচনা করার যোগ্যতা নেই। যাঁরা আরও কিছুটা পড়তে চান তাদের জন্য মূল প্রবন্ধটির শিরোনম/ গ্রন্থটির নাম উল্লেখ করে দিচ্ছি। উদ্ধৃতি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা। [ পর্ব–০১]
১) আগে আমাদের বাহিরের বাধা দূর হইবে, তারপরে আমাদের দেশপ্রীতি অন্তরের বাধা ভেদ করে পরিপূর্ণ শক্তিতে দেশের সেবায় নিযুক্ত হবে, এমন আত্মবিড়ম্বনার কথা আমরা যেন না বলি। যে বলে-‘ আগে ফাউন্টেন পেন পাব তারপরে মহাকাব্য লিখব ‘ বুঝতে হবে তার লোভ ফাউন্টেন পেনের প্রতিই, মহাকাব্যের প্রতি নয়। যে দেশাত্মবোধী বলে, – ‘ আগে স্বরাজ পেলে তারপরে স্বদেশের কাজ করব ‘ তার লোভ পতাকা-ওড়ানো উর্দি-পরা স্বরাজের রংকরা কাঠামোটার পরেই।
(ক্লালান্তর, রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রনৈতিক মত )
২) পৃথিবীতে অন্য সব জায়গাতেই দেশের মানুষ নিজের প্রকৃতি, শক্তি ও প্রয়োজনের স্বাভাবিক প্রবর্তনায় আপনিই আপনার স্বরাজ গড়ে তুলেছে; জগতে আমরাই কেবল পঞ্জিকার কোনো একটি আসন্ন পয়লা জানুয়ারিতে আগে স্বরাজ পাব, তারপরে স্বরাজ্যের লোক ডেকে যেমন করে হোক সেটাকে তাদের গায়ে চাপিয়ে দেব।
( ক্লালান্তর, রায়তের কথা)
৩) দেশের ইতিহাস ইংরেজ রচনা করে, আমরা তর্জমা করি, ভাষা তত্ত্ব ইংরেজ উদ্ধার করে, আমরা মুখস্থ করিয়া লই, ঘরের পাশে কী আছে জানিতে হইলেও-‘ হান্টার ‘ বই গতি নাই। তারপরে দেশের কৃষি সম্বন্ধে বলো, বানিজ্য সম্বন্ধে বলো, ভূতত্ত্ব বলো, নৃতত্ত্ব বলো, নিজের চেষ্টার দ্বারা আমরা কিছুই সংগ্রহ করিতে চাই না। স্বদেশের প্রতি এমন একান্ত ঔৎসুক্যহীনতা সত্ত্বেও আমাদের দেশের প্রতি কর্তব্যপালন সম্বন্ধে বিদেশিকে আমরা উচ্চতম কর্তব্যনীতির উপদেশ দিতে কুণ্ঠিত হই না। সে উপদেশ কোনোদিনই কোনো কাজে লাগিতে পারে না।
( আত্মশক্তি, সফলতার সদুপায়)
Also Visit: https://www.youtube.com/watch?v=-XrS0-ss71g
৪ ) স্বরাজ গড়ে তোলার তত্ত্ব বহুবিস্তৃত, তার প্রণালী দুঃসাধ্য এবং কালসাধ্য; তাতে যেমন আকাঙ্খা এবং হৃদয়াবেগ তেমনি তথ্যানুসন্ধান এবং বিচারবুদ্ধি চাই।তাতে যাঁরা অর্থশাস্ত্রবিদ তাঁদের ভাবতে হবে, যন্ত্রতত্ত্ববিৎ তাঁদের খাটতে হবে, শিক্ষাতত্ত্ববিৎ, রাষ্ট্রতত্ত্ববিৎ সকলকেই ধ্যানে এবং কর্মে লাগতে হবে। অর্থাৎ দেশের অন্তঃকরণকে সকল দিক থেকে পূর্ণ উদ্যমে জাগতে হবে। তাতে দেশের লোকের জিজ্ঞাসাবৃত্তি যেন সর্বদা নির্মল ও নিরভিভূত থাকে, কোনো গূঢ় বা প্রকাশ্য শাসনের দ্বারা সকলের বুদ্ধিকে যেন ভীরু এবং নিশ্চেষ্ট করে তোলা না হয়।
( ক্লালান্তর, সত্যের আহ্বান)
Can Visit: স্বাধীনতার ৭৫ বছর ও রবীন্দ্রনাথ
৫) আমি স্বদেশকে বিশ্বাস করি, আমি আত্মশক্তিকে সম্মান করি।আমি নিশ্চয় জানি যে, যে উপায়েই হউক, আমরা নিজের মধ্যে একটা স্বদেশীয় স্বজাতীয় ঐক্য উপলব্ধি করিয়া আজ যে সার্থকতা লাভের জন্য উৎসুক হইয়াছি , তাহার ভিত্তি যদি পরের পরিবর্তনশীল প্রসন্নতা উপরেই প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে তাহা পুনঃপুনই ব্যর্থ হইতে থাকিবে। অতএব ভারতবর্ষের যথার্থ পথটি যে কী, আমাদিগকে চারিদিক হইতেই তাহার সন্ধান করিতে হইবে।
( আত্মশক্তি, স্বদেশি সমাজ)
[ চলবে]