রবীন্দ্র প্রবন্ধ উদ্ধৃতি– স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা (পর্ব – ০২)
পর্ব-০১ এ পাঁচটি প্রবন্ধ উদ্ধৃতি দিয়েছিলাম। স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা – এই পর্যায়ে আরও তিনটি উদ্ধৃতি আজকের জন্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর ভাবনার প্রকাশ, মূল্যায়নের প্রকাশ এবং সেই সব ক্ষেত্রে সমাধানের পথই বা কী হতে পারে– এইসব রেখে গিয়েছেন তাঁর প্রবন্ধে। এই ব্লগে চেষ্টা করবো সেই ক্ষেত্রগুলি উদ্ধৃতি আকারে আপনাদের কাছে রাখতে।
উদ্ধৃতি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – স্বদেশ স্বাধীনতা ও আমরা। [ পর্ব–০১]
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি আগ্রহী পাঠক– ANUP BANDYOPADHYAY YOUTUBE CHANNEL -টির ” রবিধারা ” ধারাবাহিকের বিভিন্ন পর্বগুলিও শুনতে পারেন। সেখানে আরও অন্যান্য বিষয়েও আলোকপাত করতে চেষ্টা করেছি।
আজকের উদ্ধৃতি:–
১) স্বদেশ ও আমরা– প্রত্যেক জেলার ভদ্র শিক্ষিত সম্প্রদায় তাঁহাদের জেলার মেলাগুলিকে যদি নবভাবে জাগ্রত, নবপ্রাণে সজীব করিয়া তুলিতে পারেন, ইহার মধ্যে দেশের শিক্ষিতগণ যদি তাঁহাদের হৃদয় সঞ্চার করিয়া দেন, এই সকল মেলায় যদি তাঁহারা হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন করেন —- কোনোপ্রকার নিষ্ফল পলিটিক্সের সংস্রব না রাখিয়া বিদ্যালয়, পথঘাট, জলাশয়, গোচর-জমি প্রভৃতি সম্বন্ধে জেলার যে সমস্ত অভাব আছে, তাহার প্রতিকারের পরামর্শ করেন,তবে অতি অল্পকালের মধ্যে স্বদেশকে যথার্থই সচেষ্ট করিয়া তুলিতে পারেন।
(আত্মশক্তি/ স্বদেশী সমাজ)
২) স্বদেশ ও আমরা:- আমরা কিছুই কি করিয়াছি? একবার ভাবিয়া দেখো, দেশ আমাদের হইতে কত দূরে, কত সূদূরে।আমাদের ‘ ঘর হইতে আঙিনা’ বিদেশ । সমস্ত ভারতবর্ষের কথা ভাবিলে তো মাথা ঘুরিয়া যায় —- শুধুমাত্র বাংলাদেশের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক কত ক্ষীণ। এই বাংলাদেশও জ্ঞানে, প্রেমে , কর্মে আমাদের প্রত্যেকের হইতে কতই দূরে। ইহার জন্য আমরা কতটুকুই বা দিতেছে,কতটুকুই বা করিতেছি, এবং ইহাকে জানিবার জন্যই বা আমাদের চেষ্টা কত সামান্য। নিজের মন এবং ব্যবহার সত্যরূপে আলোচনা করিয়া সত্য করিয়া বলো দেশের প্রতি আমাদের ঔদাসীন্য কী সুগভীর। ইহার কোন্ দুঃখে কোন্ অভাবে কোন্ সৌন্দর্যে কোন্ সম্পদে আমাদের চিত্তকে এমন করিয়া আকর্ষণ করিয়াছে যে, নানা দিক হইতে আমাদের নানা লোক তাহার প্রতি আপন সময় ও সামর্থ্যের বহুল অংশ ব্যয় করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছে। আমরা শিক্ষিত কয়েকজন ও আমাদের দেশের বহুকোটি লোকের মাঝখানে একটা মহাসমুদ্রের ব্যবধান। ত্রেতাযুগে সেতুবন্ধনে কাঠবেড়ালি যতটুকু কাজ করিয়াছিল আমাদের মাঝখানের এই সমুদ্র সেতু বাঁধিতে আমরা ততটুকুও করিয়া নাই। সকল বিষয়ে সকল কাজই বাকি পড়িয়া আছে।
( পরিশিষ্ট / ব্যাধি ও প্রতিকার)
৩) স্বদেশ ও আমরা:– আমাদের এমন অনেক উৎসাহী যুবক আছেন যাঁহারা দেশের জন্য কেবল বাক্যব্যয় নহে , ত্যাগ-স্বীকারে প্রস্তুত। কিন্তু কী করিবেন, কোথায় যাইবেন,কী দিবেন, কাহাকে দিবেন, কাহারও কোনো ঠিকানা পান না। বিচ্ছিন্নভাবে ত্যাগ করিলে কেবল নষ্টই করা হয়। দেশকে চালনা করিবার একটা শক্তি যদি কোথাও প্রত্যক্ষ আকারে থাকিত তবে যাঁহারা মননশীল তাঁহাদের মন, যাঁহারা চেষ্টাশীল তাঁহাদের চেষ্টা, যাঁহারা দানশীল তাঁহাদের দান একটা বিপুল লক্ষ্য পাইত — আমাদের বিদ্যাশিক্ষা, আমাদের সাহিত্যানুশীলন, আমাদের শিল্পচর্চা, আমাদের নানা মঙ্গলানুষ্ঠান স্বভাবতই তাহাকে আশ্রয় করিয়া সেই ঐক্যের চতুর্দিকে দেশ বলিয়া একটা ব্যাপারকে বিচিত্র করিয়া তুলিত।
( আত্মশক্তি/ সফলতার সদুপায়)
আপনারা দেখতেই পারছেন প্রতিটি উদ্ধৃতির শেষে বন্ধনীতে গ্রন্থ ও প্রবন্ধের নাম লেখা রয়েছে। পূর্ণ অর্থ পেতে গেলে সম্পূর্ণ প্রবন্ধটি পড়া জরুরি। এই অংশগুলি কখনোই সম্পূর্ণকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে না — এরা কিছুটা দিক্ নির্দেশ করতে পারে মাত্র।
** স্বদেশ, স্বাধীনতা ও আমরা- এই পর্যায়ে আমরা আরও দুটি পর্ব নিয়ে আসছি।
নমস্কার।